জ্যোৎস্নার বন্যায় রাতের আঁধারটা লুকিয়ে যায়। বুকের ভেতরে বাজে শূন্যতার এক মর্মান্তিক হাহাকার। ধ্রুব যতোই স্মৃতির দুঃসহ যন্ত্রণায় মলম লাগাতে যায়, ততোই বেদনাটা বেড়ে চলে। রাতের জ্যোৎস্নাটা ক্রমশ অসহ্য লাগে তার। চোখ বন্ধ করে জ্যোৎস্নার অস্তিত্বকে ভুলতে চায় সে। কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই তন্দ্রা’র ছবিটা ভেসে ওঠে। চোখ খুলে ধ্রুব ভাবে, কি অদ্ভুত মিল তন্দ্রা এবং আঁধারের! ধ্রুবের মনে পড়ে সে শেষ বিকেলটির কথা। পরীক্ষার ব্যস্ততায় বেশ কিছুদিন তন্দ্রার সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখতে পারেনি সে। ধ্রুব’র রিকশাটা যখন তন্দ্রাদের সদর দরজার কাছে থামে, তখনই চোখে পড়ে দৃশ্যটা। সুদর্শন এক যুবকের সঙ্গে হর্ষোৎফুল্ল তন্দ্রা গেটের দিকে আসছে। গেটের সামনে দাঁড়িয়েই কথা ধ্রুব’র সঙ্গে তন্দ্রা’র। ধ্রুব, এ হচ্ছে জয়- আমার হবু বর। আগামী মাসের সাত তারিখে আমাদের বিয়ে। ও অ্যামেরিকায় থাকে, বিয়ের পর দু’জনেই ওখানে পাড়ি দেব। ধ্রুব কোন কথা বলতে পারে না। পরম সুখ কিংবা চরম কষ্ট মানুষকে এমন নির্বাক করে দেয় যে, সে স্থান, কাল, পাত্র সবকিছু থেকে কেমন যেন আলাদা হয়ে যায়। ধ্রুব চোখ ফিরিয়ে দেখে, জয় গাড়ির দরজা খুলে দিচ্ছে আর তন্দ্রা মোহময়ী হাসি দিয়ে সেটিতে চড়ছে। ধ্রুব আর সহ্য করতে পারে না। একটা নীল কষ্ট এসে হঠৎ করেই তাকে ছুঁয়ে যায়। জীবনটা বুঝি এরকমই! একান্ত জনকে নিয়ে যখন কেউ অনন্ত সুখের স্বর্গ রচনা করে সেই একজনই তাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দেয়। তন্দ্রার দেয়া কষ্টটা খুব বেশি হৃদয়ে বাজে ধ্রুবের। তন্দ্রাহীন ধ্রুবকে সে কখনও ভাবতে পারে না। নারীজাতটার প্রতিই কেমন যেন বিদ্বেষী হয়ে ওঠে সে। তারপরও মন থেকে তন্দ্রা কিংবা তন্দ্রার স্মৃতি কোনটিই মুছতে পারে না ধ্রুব। তার হৃদয়ে যে তন্দ্রার নামটি অমোচনীয় কালিতে লেখা হয়ে গেছে। কষ্টের দহনে পলে পলে দগ্ধ হয় সে। তন্দ্রাকে দোষ দিতে পারে না সে। ভাবে, সুখের সন্ধানে পৃথিবী যেখানে ব্যস্ত, সেখানে তন্দ্রা তো সুখ খুঁজবেই। আবার সুখের সংজ্ঞা নিয়ে সংশয়ে ভুগে ধ্রুব। তন্দ্রা ধ্রুবের সঙ্গে যে সুখের গল্প করতো, হৃদয় দিয়ে অনুভব করার বলতো; সে সুখ তাহলে কি? ক’দিনেই এতোটা বদলে গেলো তন্দ্রা। খবরটা শোনে শোয়া থেকে ওঠে বসলো ধ্রুব। তন্দ্রাদের বাড়ির কাজের লোকটার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে ভাঁজ খোলে চোখের সামনে মেলে ধরে। ধ্রুব, অনন্ত সুখ পায়ে দলে যেদিন ক্ষণিকের মোহের আত্মসুখে পাগল হয়েছিলাম, সেদিন তোমার কষ্টটা অনুভব করতে পারিনি। যখন বুঝলাম, এ সুখ যা তোমার কাছ থেকে বরাবর পেয়ে এসেছি তা নয়, বরং বড়োই বীভৎস-আত্মকেন্দ্রিক। শরীর নিয়ে খেলা যেদিন ফুরোলো, সেদিনই প্রথম আমার ভুলটা চোখে পড়ে। তারপর থেকে আমাকে জয়ের ক্রমশ এড়িয়ে চলা এবং একদিন আমাকে না জানিয়ে ওর দেশত্যাগ নিজের উপর জন্মানো ঘৃণার মাত্রাটাকে কেবল বাড়িয়েছেই। আঁধারকে আলো ভেবে মরীচিকার পেছনে ছোটাটাই বুঝি সার হলো। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজেই কষ্টের শিকলে বাঁধা পড়ে গেছি। পারলে আমায় ক্ষমা কর ধ্রুব। তন্দ্রা। চিঠিটা পড়তে পড়তে কখন যে দু’ফোঁটা অশ্রু চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ে টেরই পায় নি ধ্রুব। তার কেবলই মনে হয়, আলোর বহ্নিশিখারা বুঝি এভাবেই হারিয়ে যায়। ভালোবাসার আলোকরাঙা জীবন যেভাবে হাবুডুবু খায় আঁধারের চোরাগলিতে। জোৎস্নামাখা মায়াময় রাত বিস্বাদ ঠেকে ধ্রুব’র। জেঁকে বসা কষ্টের মতোই আঁধারের অতলে হারিয়ে যেতে গিয়েও কোথায় যেন আটকে যায় সে। গভীর দীর্ঘশ্বাসের বেদনার মাঝেও ধ্রুবের মানসপটে ভেসে ওঠে সেই প্রিয়মুখ। একান্তে খোঁজে ফিরে অধরা সে হৃদয় মানবীকে, যে আজ বহুদূরে কোন এক আঁধারের ঠিকানায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আখতারুজ্জামান সোহাগ
অনেক তন্দ্রা-ই ক্ষণিকের মোহে পড়ে সর্বস্ব হারায়। যতক্ষণে তাদের ভুল তারা বুঝতে পারে ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেকটাই।
আপনার গল্প ভালো লেগেছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।